তৃতীয় প্রজন্ম Third Generation (১৯৬৫-৭০ খ্রি.)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK
18

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation of Computers) প্রায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলিতে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার করা শুরু হয়, যা কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে এবং এর কার্যক্ষমতা ও গতি অনেক বৃদ্ধি করে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার কম্পিউটার শিল্পে বিপ্লব ঘটায় এবং আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে।

তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) ব্যবহার:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ট্রানজিস্টরের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করা হয়, যা ছোট সিলিকন চিপে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর যুক্ত করে।
  • IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

কম্পিউটারের আকার ছোট হওয়া:

  • এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অনেক ছোট এবং হালকা ছিল, ফলে এগুলি সহজেই ইনস্টল এবং ব্যবহার করা সম্ভব ছিল।

উন্নত অপারেটিং সিস্টেম:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে উন্নত অপারেটিং সিস্টেম (OS) ব্যবহৃত হয়, যা মাল্টি-প্রোগ্রামিং এবং মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা প্রদান করে।
  • কম্পিউটার একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালাতে এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছিল।

উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা:

  • এই প্রজন্মে FORTRAN, COBOL, এবং BASIC এর মতো উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হতো, যা প্রোগ্রামিংকে আরও সহজ এবং কার্যকর করত।
  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহজ হওয়ার কারণে এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে প্রোগ্রামিং করা আগের চেয়ে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ব্যবহারের সহজতা এবং কার্যকারিতা:

  • তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আরও নির্ভুল এবং দ্রুত ছিল। IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
  • কম বিদ্যুৎ খরচের কারণে এগুলির ব্যবহার আরও কার্যকর হয়ে ওঠে, এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় সহজ ছিল।

তৃতীয় প্রজন্মের উদাহরণ:

  • IBM System/360: এটি তৃতীয় প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার যা বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারত এবং বিভিন্ন মডেল হিসেবে উপলব্ধ ছিল।
  • Honeywell 6000 series এবং PDP-8: এই কম্পিউটারগুলোও তৃতীয় প্রজন্মের আইসির ভিত্তিতে তৈরি এবং কার্যকরভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • মাল্টি-প্রোগ্রামিং ও মাল্টি-টাস্কিং: কম্পিউটারে একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানো এবং বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষমতা তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
  • বাণিজ্যিক ব্যবহার: এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির আকার ছোট হওয়ার কারণে, এগুলি ব্যবসা, শিক্ষা, এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
  • উন্নত প্রোগ্রামিং সুবিধা: উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহারের ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আরও সহজ এবং কার্যকর হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে সহায়ক হয়।

তৃতীয় প্রজন্মের সীমাবদ্ধতা:

  • যদিও তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে IC ব্যবহারের কারণে আকার ও বিদ্যুৎ খরচ কমেছিল, কিন্তু সেই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে আরও ছোট আকারের IC তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
  • উন্নত অপারেটিং সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও, কিছু জটিল কাজের জন্য এটির ক্ষমতা সীমিত ছিল।

সারসংক্ষেপ:

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এতে IC-এর ব্যবহার কম্পিউটারের আকার, কর্মক্ষমতা, এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেছিল। এই প্রজন্মের প্রযুক্তি পরবর্তীতে আরও উন্নত চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

Content updated By
Promotion